আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট ট্রাক ও ট্যাংক লড়ি মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী লালসহ গ্রেফতার ৪জন আসামীর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ আসামীদের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আসামীদের পক্ষে জামিন প্রার্থনা করেন সাবেক জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ময়জুল ইসলাম ময়েজ। অপরদিকে জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন কোট পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা। বিজ্ঞ আদালত নির্যাতনের ভিডিও চিত্র দেখেন এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আসামীদের জামিন না মঞ্জুর করেন।
মমিনুল ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরকে তেলের জারকিন চুরির অপরাধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা ট্রাক, ট্যাংক লড়ি মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী লালকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আটক করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
গ্রেফতার আশরাফ আলী লাল (৫৫) লালমনিরহাট পৌর শহরের মিশন মোড়স্থ এলাকার আহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি মিশন মোড়স্থ সীমান্ত আবাসিক হোটেল ভবনের মালিক। তার ইটভাটাও রয়েছে। তিনি কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। অপর আসামীরা হলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা এলাকার মৃত সুশীল চন্দ্র রায়ের ছেলে মধু চন্দ্র রায় (৩২), আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী এলাকার মৃত শশী মোহন রায়ের ছেলে বিমল চন্দ্র রায় (৩৭) ও একই উপজেলার সাপ্টীবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব দৈলজোড় এলাকার মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে আব্দুল মান্নান (২২)। এসব আসামি আশরাফ আলী লালের সীমান্ত ভবনের ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী।
ওই কিশোরকে নির্যাতনের সময় কে বা কাহারা মোবাইল ফোনে ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল করে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপরই লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার নির্দেশে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ রাতেই নির্যাতনকারী ওই ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী লালকে তার মিশন মোড়স্থ বাসা থেকে আটক করে। এরপর লালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্যাতনের শিকার মমিনুল ইসলাম নামের ওই কিশোরকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার চাঁদনী বাজার আবাসন থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার বাবার নাম মৃত নুর মোহাম্মদ। লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাপ্তাহিক আলোর মনি ও আলোর মনি ডটকমের হাতে আসা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় চত্ত্বরে মেসার্স আল মামুন ফার্টিলাইজার দোকান ও সীমান্ত আবাসিক হোটেলের মালিক আশরাফ আলী লাল তেল চুরি করার অপরাধে মমিনুল ইসলামকে মারধর করে মাটিতে ফেলে মুখে ও গলায় পা তুলে অমানুষিক নির্যাতন করে। এ সময় তাঁর লোকজনও ওই কিশোরকে মারধর করে। একাধিক মানুষ নীরবে দাঁড়িয়ে ওই দৃশ্য দেখলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। তবে কেউ একজন মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা ফেসবুকে শেয়ার করলে ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে। ভাইরাল হওয়া ২মিনিট ৪৩সেকেন্ডের ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ব্যবসায়ী আশরাফ আলী লালসহ আরো ২-৩জন তাকে বার বার মাটিতে ফেলে বেধরক মারধর এবং পা দিয়ে মুখ ও গলা চেপে ধরছেন। আত্মরক্ষায় ছেলেটি অনেকের পা জড়িয়ে ধরলেও কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি।
লালমনিরহাট সদর থানার এসআই মশিউর রহমান বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে ওসি মাহফুজ আলম স্যারের নেতৃত্বে আমরা রাতেই প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার কিশোর মমিনুল ইসলামকে শনাক্ত করেছি। মমিনুল ইসলামের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, কাজকর্ম না থাকায় অসুস্থ মায়ের খাবারের জন্য মিশন মোড়ে সীমান্ত হোটেলের সামনে ইজিবাইক থেকে একটি তেলের জারকিন চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। ওই ঘটনায় তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে আশরাফ আলী লাল ও তার সহযোগীরা। এই ঘটনায় কিশোর মমিনুল ইসলাম ৬জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ২/৩জনের নামে একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলার এজাহার নামীয় অপর ৩জন আসামীকে পরে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে এজাহার নামীয় ২জন আসামীসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩জন আসামী পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ আলম জানান, অভুক্ত মায়ের খাবারের জন্য মমিনুল ইসলাম নামের এক কিশোরকে অমানুষিক নির্যাতন করার অপরাধে প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি আশরাফ আলী লালকে রাতেই তার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অপর আসামী মধু চন্দ্র রায় (৩২), আব্দুল মান্নান (২২) ও বিমল চন্দ্র রায় (৩২) কেও তাদের বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অপর ২জন এজাহার নামীয় আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, এই ঘটনায় যিনিই জড়িত থাকুক। পরিচয় দেখে নয়। তাকে তার অপরাধ বিবেচনা করে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশের হাতে সম্পূর্ণ ভিডিওচিত্রটি আছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের দেখে দেখে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।